বাবুনের গোয়েন্দাগিরি-২য় পর্ব

রুস্তমের সাথে 


ছুটির মিউজিকের সাথে সাথে ক্লাসের ছেলেদের মধ্যে একটা মোটামুটি ভাল রকমের রেস লেগে যায় কার আগে কে বের হবে। বাবুনের অবশ্য ক্লাস থেকে বের হবার খুব একটা তাড়া থাকে না। তার উপর আজকের কথা ভিন্ন, ছুটির পর লিটন দাঁড়িয়ে থাকবে আর এই দৃশ্য বাবুন খানিকক্ষণ না দেখে চলে যাবে এও কি হয়। নিজের মনে একটু মু-হাহা টাইপ হাসি হেসে নেয় বাবুন। মু-হাহা হচ্ছে ভিলেন হাসি, নেহায়েত দেয়ালে পিঠ ঠেকে না গেলে এই হাসি বাবুন খুব একটা হাসে না। ক্লাসে এখন শুধু বাবুন আর লিটন। এমনি বসে বসে তো কারো দিকে তাকিয়ে থাকা যায় না তাই ব্যাগ থেকে সব বই খাতা বের করে আবার নতুন করে ভরতে শুরু করল সে। ছুটির পরে ফাস্ট বয় আবার অঙ্ক স্যরের কাছে এক্সট্রা ক্লাস করে সেই ক্লাস আজ মিস হয়ে যাওয়ায় লিটন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাঁদছে, বাবুনের মনটা নরম হয়ে গেল এই কান্না দেখে। কাল ক্যান্টিনের ফ্রি সিঙ্গারাটা লিটনকে খেতে দিতে হবে। 


মানুষের মত গাছের ও জীবন আছে মানুষের মতই এদের ও খাওয়া দাওয়া করতে হয়। স্কুলের গোলাপ গাছকে ফ্লাক্সের সমস্ত পানিটুকু খেতে দিয়ে খালি ফ্লাক্স নিয়ে স্কুল গেট থেকে বের হয়ে এলো বাবুন। গেটের বাইরে রুস্তমকে দেখা যাচ্ছে যাত্রীর আশায় ইতি উতি চাইছে। রুস্তম নাম শুনলেই মনে হয় হাট্টা গোট্টা পালোয়ান কিংবা লাঠিয়াল টাইপ কেউ কিন্তু বাস্তবে বাবুনদের রুস্তম পুরোই উল্টো এক কথায় বলতে গেলে লিকলিকে এক তাল পাতার সেপাই। এই রুস্তম হল তাদের ড্রাইভার। রুস্তমের সাথে বাবুনের আবার বিরাট খাতির। আজ গেটের বাইরে আইসক্রিম ওয়ালাকে দেখা যাচ্ছে। রুস্তম বাবুনের হাতে একটা অরেঞ্জ ললি ধরিয়ে আবার প্যাসেঞ্জার খোঁজায় মন দিলো। ছুটির পর তাকে বাসায় নেয়ার সময় রুস্তম এক দু জন প্যাসেঞ্জার তুলে নেয় গাড়িতে এতে তার বাড়তি কিছু আয় হয় আর বাবুন ও এ ব্যাপারে বাসায় কিছু বলে না কারণ এর বদলে ছুটির পর আইসক্রিম, ঝালমুড়ি অথবা আচার কিছু না কিছু কিনে খাওয়ায় তাকে রুস্তম। কোন এক জ্ঞানী মানুষ বলেছেন " যে গাছে ফল ধরে, আর সেই ফল তুমি মজা করে খাও সেই গাছ কখনো কেটে ফেলবে না। " তাই রুস্তমের কথা বাসায় বলার তো প্রশ্নই ওঠে না। আজ আমড়া ওয়ালাকেও দেখা যাচ্ছে, ফুলের মত করে কাটা আমড়া কাঠিতে সাজিয়ে রেখেছে। এখন পর্যন্ত কোন যাত্রী পাওয়া যায় নি তাই আমড়ার দিকে তাকিয়ে লাভ হবে বলে মনে হচ্ছে না। 



দুই হাতে দুটি আমড়ার কাঠি ধরে বাবুন এক লোকের কোলে বসে আছে। একটা তার আর আরেকটা রুস্তমের। রুস্তম গাড়ি চালাচ্ছে তাই আমড়াটা দিয়েছে বাবুনকে ধরতে। আজ প্যাসেঞ্জার হচ্ছে চার জন। একজন সামনে বসেছে আর পেছনে তিন জন, এদের ই একজনের কোলে বসে আমড়া খাচ্ছে বাবুন। সে যার কোলে বসে আছে সে আবার সোজা হয়ে বসেও থাকতে পারছে না। ঝিমিয়ে পাশের জনের কাঁধে ঢলে পড়ছে কিছুক্ষণ পরপর। তাদের জায়গা মত নামিয়ে দিয়ে বাবুনরা বাসায় পৌঁছল। গাড়ি থেকে নামার সময় বাবুন দেখল একটা চাবির রিং আর একটা ফোন নাম্বার লেখা কাগজ পড়ে আছে সিটে। মনে হয় তিন জনের মধ্যে কোন একজনের পকেট থেকে পড়েছে। ব্যাগের সাইট পকেটে সেগুলো ঢুকিয়ে অর্ধেক খাওয়া আমড়াটা রুস্তমকে দিয়ে বাসায় ঢুকল বাবুন।

(চলবে)

No comments:

Post a Comment