বাবুনের গোয়েন্দাগিরি- ১ম পর্ব

ইস্কুলে শায়েস্তা  
মনে হয় না আজকে বাবুনের কপালে কিছু জুটবে। ১৫ মিনিট ধরে দাঁড়িয়ে আছে কিন্তু ভিড় কমার কোন লক্ষণ পর্যন্ত নাই। আর মিনিট পাঁচেক পরেই অবশ্য ফাঁকা হয়ে যাবে কিন্তু তখন ফাঁকা হলেও ফায়দা নেই তার। এদিকে পেট চোঁ চোঁ করছে ক্ষুধায়। কোন এক জ্ঞানী মহা পুরুষ বলেছে "কর্ম করার পূর্বে তা নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করিও কিন্তু করার পরে তা নিয়ে গুঁতোগুঁতি না করাই ভাল।" উহু কথাটা মনে হয় এত বড় ছিল না। বচন টাইপ কথা বাবুন মনে রাখতে পারে না তাই যখন ই এমন কথা বলে কথার অর্থ ঠিক রেখে নিজের ভাষায় বলে, একটু লম্বা হয়ে যায় লাইন তবু কি আর করা। ইস ধাক্কা ধাক্কি খানিকটা কমে এলো বলে, টিফিন টাইম শেষ প্রায়। এখনই মিউজিক বাজবে। ঘণ্টার ঢং ঢং শব্দটা ভারী মধুর লাগে বাবুনের আর কানে যে শব্দ মধুর লাগে তা তো এক রকম মিউজিক ই। ভলু মামার ডাকে বাবুনের ভাবনায় ছেদ পড়ে। তার হাতে একটা সিঙ্গারা; পেপারের কাগজে মুড়ে সেটি বাবুনের হাতে গুঁজে দিলেন মামা, বললেন আজ আর কিছু অবশিষ্ট নাই। সিঙ্গারা হাতে নিয়ে ক্যান্টিন থেকে ক্লাসের দিকে হাঁটা দিলো বাবুন। সিঙ্গারায় কামড় বসাতে গিয়ে দেখে সিঙ্গারা ফুটো আর এর ভেতরে কিচ্ছুটি নাই। নাহ আজকের দিনটা পুরাই কুফা। যেই বিজ্ঞ পুরুষ কাজ নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি আর গুঁতোগুঁতি সম্পর্কে সত্য বচন বলেছিলেন তিনি বোধহয় আজকের মত পরিস্থিতিতে পড়েই এই কথা বলেছিলেন।

বাবুনের মা ভীষণ কড়া মহিলা অবশ্য তা শুধুমাত্র বাবুনের জন্য। বাইরের খাবার স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয় তাই বাবুনের টিফিন হয় রোজ বাসার খাওয়া। লক্ষ্মী ছেলের মত বাবুন বাসা থেকে টিফিন নিয়ে আসে কিন্তু টিফিন টাইমে তা কাওকে না কাওকে গুঁজে দেয় আর যেদিন গছাতে না পারে সেদিন অন্য ব্যবস্থা নিতে হয়। না না টিফিন সে বাস্কেটে ফেলে দেয় না কারণ খাওয়া নষ্ট করা পাপ। টিফিনের ল্যটা চুকিয়ে বাবুন ক্যান্টিনের সামনে এসে দাঁড়ায়। ছেলেদের হাতে টাকা পয়সা দিলে তারা বিপথে চলে যায় তাই বাবুনের হাতে টাকা পয়সা থাকে না কখনো। ক্যান্টিনে খাওয়া বিক্রি করেন যে ভলু মামা তার সাথে ঘটনা চক্রে বাবুনের খাতির হয়ে গিয়েছিলো। টিফিন টাইমে সব খাওয়া বিক্রির পর দু'এক টা যে সমুচা কিংবা সিঙ্গারা থাকে তা তিনি বাবুনকে দেন অবশ্য এমনি এমনি না, এখানেও কাহিনী আছে। ক্ষুধা পেটে আজ বাকি ক্লাস করতে হবে বাবুনকে।



ছুটির আগের ক্লাসে বাবুনের মনটা ভাল হয়ে গেলো কারণ সে দেখতে পাচ্ছে হেড স্যার হেঁটে হেঁটে তাদের ক্লাসের দিকেই আসছে। নাহ আজকের দিনটা মোটেও কুফা যায় নি বরং ভীষণ শুভ বাবুনের জন্য। হেড স্যার ধুপধাপ করে হেঁটে বাবুনদের ক্লাসেই ঢুকলেন। পেটের চিনচিনে ক্ষুধাটা নিমিষে উধাও হল বাবুনের। 

ছেলেরা সবাই নিজের ব্যাগ সামনে রাখো এখন ব্যাগ চেকিং হবে। বই-খাতা, কলম বাদে কারো কাছে যদি কিছু পাওয়া যায় তবে তার শাস্তি অনিবার্য। শুধুমাত্র লিটন ছাড়া অন্য কারো ব্যাগ থেকে কিছু বের হল না। স্পাইডার ম্যানের স্টিকার বের হল লিটনের ব্যাগ থেকে। আমতা আমতা করে কিছু বলতে যাচ্ছিল লিটন কিন্তু হেড স্যার হুঙ্কার দিয়ে থামিয়ে দিলেন। ছুটির পর ১ ঘণ্টা কানে ধরে দাঁড়িয়ে থাকার হুকুম দিয়ে স্যার হনহন করে বেরিয়ে গেলেন। লিটন ক্লাসের ফার্স্ট বয় তার উপর ক্যাপ্টেন তাই অর্ধেকের বেশী ছেলেই তার চেলা। লিটনের এই দুঃখে তারাও মুখ আমচুর করে ফেললো মুহূর্তে। খুশিতে দাঁত বের না হলেও বাবুনের মেজাজ ফুরফুরে হয়ে গেলো কারণ তার মিশন সফল হয়েছে। অবশ্য তার শখের স্টিকার গুলি হাতছাড়া হয়ে গেলো কিন্তু তাতে কি। কোন এক বিজ্ঞ পুরুষ বলেছেন "যখন নিজের পছন্দের কিছু করতে ইচ্ছা করবে তখন প্রয়োজনে নিজের প্রিয় কিছু দিতে পিছিয়ে পড়লে চলবে না।" উহু কোথাটা মনে হয় এমন লম্বা নয় কিন্তু অর্থ দাড় করালে এমনটিই দাঁড়াবে। গতকাল সপ্তহে লিটন তাকে বেবুন বেবুন বলছিল কিন্তু বাবুন তাতে কিছু মনে করে নি কারণ বেবুন কি জিনিস তা সে জানতো না। যখন জানলো বেবুন হল বাঁদর জাতীয় একটি প্রাণী তখন থেকে সে লিটনকে জব্দ করার কথা ভাবছে। ফার্স্ট বয় তার উপর ক্যাপ্টেন তাই তার সাথে সম্মুখ যুদ্ধে যাওয়া বোকামি। বাবুন সে বোকামি করে নি সে প্রতিশোধ নিয়েছে অন্য ভাবে। লিটনের ব্যাগে স্টিকার লুকিয়ে তাকে কেমন শিক্ষা দিলো বাবুন। অবশ্য তার ভাগ্য বিরাট ভালো বলতে হয় কারণ আজই সে স্টিকার রেখেছে আর আজই ব্যাগ চেকিং হলো। 



কথায় আছে যার প্রথম থেকে সব কিছু ভাল মত হয় তার শেষের দিকের সব কিছুও ভাল মত হয়। উঁহু কথাটা কি ভাবে যেন বলে এখন মনে পড়ছে না তবে সারমর্ম এটাই হবে। বাবুনের জন্য এই কথাটা পুরো মিথ্যা প্রমাণ হল। আজকে প্রথম ক্লাসের পুরোটা সময় তাকে ব্ল্যক বোর্ডে নাক লাগিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে কারণ সে সমাজ খাতায় বাংলা বাড়ির কাজ করে এনেছে। অবশ্য এতে বাবুনের দোষ ছিল না। খাতার মলাট ছিঁড়ে যাওয়ায় মা নতুন করে মলাট করে দিয়েছিলো গতকাল কিন্তু খাতার উপর নাম রোল লিখতে যেয়ে মা ঘাপলা করে দিয়েছে তা কি আর বাবুন জানতো। সমাজ খাতার উপর লিখেছে বাংলা আর বাংলার উপর সমাজ। সকালে শাস্তির সময় বাবুন ভাবছিল শাস্তি দিয়ে শুরু তাই শেষ ক্লাসটাও খারাপ ই যাবে। কিন্তু কাহিনীতে টুইস্ট এনে দিলেন হেড স্যর। আজকে থেকে বাবুন স্যরের কাছে ঋণী হয়ে রইল, জলদি ই সে স্যরকে উপযুক্ত পুরস্কার দেবে।

(চলবে)

No comments:

Post a Comment