পত্রিকায় ছাপানো ছোটদের গল্প, কবিতা আর ছড়া পড়তে আবির দারুণ পছন্দ করে। ছোটদের আঁকা দেখতে ও তার খুব ভাল লাগে। এইতো সেদিন শুক্রবার ছোটদের পাতায় ছাপানো হয়েছিল আবিরের বন্ধু আফিফের আঁকা একটা ছবি। ক্লাসে সবার মুখে ছিল আফিফের প্রশংসা। সবার কাছে রীতিমতো হিরো বনে গেল আফিফ। আবিরের ও বহু দিনের ইচ্ছা পত্রিকায় লেখা ছাপাবার কিন্তু বানিয়ে বানিয়ে লেখা তো আর সোজা কথা নয়। তবু ও হাল ছড়ল না আবির। পড়ার ফাঁকে খেলার কথা ভুলে রোজ সে ভাবতে থাকে কি ভাবে লেখা শুরু করবে। প্রথমে সে গল্প লেখার চেষ্টা শুরু করল। বেশ কিছু দিন হয়ে গেল কিন্তু গল্প লেখায় বিশেষ সুবিধা করে উঠতে পারলো না আবির। এবার তার মাথায় এলো ছড়া লেখার বুদ্ধি। কিন্তু প্রথম লাইন লেখার পর দ্বিতীয় লাইন লিখতে গিয়ে আর সে ছন্দ মেলাতে পারেনা। কোন ভাবেই যখন লেখা শুরু করতে পারছিলনা তখন আবির গেল আপুর কাছে। কিন্তু সে ছড়া লিখতে চায় এটা শুনে আপু যদি হাসাহাসি করে, এই ভয়ে সরাসরি কিছু বলল না। আপুর সাথে দুষ্টুমি করতে করতে জানতে চাইলো কবিতা বা ছড়া কিভাবে লিখতে হয়। আপু তাকে বলল যে প্রথমে কি বিষয়ে লিখবে তা পছন্দ করে নিতে হয়।তারপর কি লিখবে তা মনে মনে ভেবে গুছিয়ে নিতে হয় এবং কাগজে তাকে ছন্দ মিলিয়ে তুলে ধরতে হয় । ছড়া লেখা তো তবে ভীষণ কঠিন। বিষয় পছন্দ করতে ই আবিরের লেগে গেল এক সপ্তাহ। এবার ছন্দ দেবার পালা । এই কঠিন কাজটি করতে রীতিমত আবিরের রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেল।
শেষ পর্যন্ত আবির পেরেছে। একবার ভাবল কবিতাটা মাকে দেখাবে কিন্তু মা যদি কবিতাটা আপুকে শোনায় তবে তো আপু তাকে নিয়ে ঠাট্টা শুরু করে দেবে। কি জানি আপু হয়তো আবিরকে রবীন্দ্রনাথ কিংবা শামসুর রহমান নামেই ডাকাডাকি করবে বাসায়। এই কবিতাটা সে পত্রিকায় ছাপানোর জন্য পাঠাবে, কিন্তু যদি ছাপা না হয় তবে তো কথাই নেই। আপু অবশ্যই তার নাম দিয়ে দেবে বিরহী নজরুল। মা আর আপুর সামনে তখন মুখ দেখানোই দায় হয়ে যাবে। কিন্তু বড় কারো সাহায্য ছাড়া কি ভাবে সে তার লেখা পত্রিকায় পাঠাবে? এসব চিন্তা করে আবিরের মন খারাপ হয়ে যায়।
স্কুলের পাশে অনেক দোকানের মাঝে একটা দোকানে লেখা ছিল কুরিয়ার সার্ভিস। মা বলেছিলেন এখানে চিঠি দিলে খুব কম সময়ে যথা স্থানে পৌঁছে যায়। সকাল বেলা আবির বাবার সাথে স্কুলে আসে আর ছুটির সময় মা বাসয় নিয়ে যায়। আবির সুযোগ খুঁজতে থাকে কি ভাবে তার লেখাটা কুরিয়ার সার্ভিসে দেয়া যায়। আপুর থেকে সাদা খামতো সে কবে ই জোগাড় করে রেখেছে। শুধু কি তাই? সেই খামে সে নিজের নাম ঠিকানা আর পত্রিকার ঠিকানাও সে লিখে ফেলেছে। টিফিনের টাকা থেকে জমিয়ে দশটা টাকাও সে আগেই ঠিক করে রেখেছে। একদিন সত্যি সত্যি আবির একটা দারুণ সুযোগ পেয়ে গেল। মায়ের আসতে আজ একটু দেরি হবে তাই ছুটির পর সে তার খামটি নিয়ে গেল সেই দোকানে। খামটা দিতেই দোকানী আবিরের হাত থেকে দশ টাকা নিয়ে তাকে একটা রশিদ ধরিয়ে দিল। তার লেখা কবিতা জায়গা মত পৌঁছাতে সময় লাগবে মাত্র দু দিন। এবার শুধুই দিন গোনার পালা। শুক্র বারেই হয়তো দেখবে পত্রিকায় তার লেখায় কবিতা।
মা তাকে ব্যাপারটা বুঝিয়ে বললেন তখন। সাদা খামে যদি প্রাপক আর প্রেরক উল্লেখ নাও থাকে তবু বাম দিকে নিজের নাম ঠিকানা ও ডান দিকে প্রাপকের নাম, ঠিকানা লিখতে হয়। আবির করেছিল ঠিক উল্টো তাই এই বিপত্তি। কবিতা পত্রিকা অফিসে না যেয়ে চলে এসেছে বাসার ঠিকানায়। আবির স্কুলে থাকায় এ সব তার অজানা। মা আর আপু তাকে সারপ্রাইজ দেবার জন্য কিছু বলে নি। মা অবশ্য কবিতার প্রশংসা করেছে আপু ও বলেছে সুন্দর হয়েছে। আর বাবা বলেছেন তিনি পত্রিকার ঠিকানায় পাঠিয়ে দেবেন।
এবার আর কোন ভুল হবার সম্ভাবনা নেই। তাই আবির অপেক্ষায় আছে সামনের শুক্রবার নিশ্চয় তার লেখা ছাপা হবে এবার পত্রিকায় লেখা ছাপিয়ে বন্ধুদের সারপ্রাইজ দেবে আবির।
No comments:
Post a Comment